বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি - বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য

সরিষা বাংলাদেশের অন্যতম লাভবান ফসল গুলোর মধ্যে একটি। তবে সঠিকভাবে চাষবাদ করতে না জানলে খুব একটা লাভবান হওয়া যায় না। সরিষা চাষে লাভবান হওয়ার জন্য অবশ্যই ভালো জাত ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সবচেয়ে লাভবান হওয়া যায় বারি সরিষা চাষ করে। তাই বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি ও বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য জেনে এই সরিষার চাষ করলে দ্রুত লাভবান হতে পারবেন।
বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি - বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য
সরিষার বেশ কিছু জাত রয়েছে, সাধারণত জাত ভেদে এই সরিষা গুলোর ভিন্ন ভিন্ন ফলন হয়। বেশি ফলন হয় এরকম সরিষা গুলোর মধ্যে একটি হলো বারি সরিষা ১৪। তাই আপনি যদি এই সরিষার চাষ করতে চান সে ক্ষেত্রে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি ও বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে চাষ করুন। বারি সরিষা সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয় জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি - বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য

বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি

অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য অনেকেই বারি সরিষা ১৪ চাষ করেন। কিন্তু সঠিকভাবে চাষ পদ্ধতি না জানায় ভালো ফলন পাননা। সঠিকভাবে চাষ করলে প্রচুর পরিমাণে ফলন পাওয়া যায়। অন্যান্য সরিষার চাষের চাইতে বারি সরিষা চাষ করা খরচ অত্যন্ত কম। খরচের তুলনায় বারি সরিষা ১৪ চাষে অত্যন্ত লাভজনক। 
অনেকে বারি সরিষা ১৪ চাষ করবেন বলে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান। অন্যান্য সর্ষের মতোই বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি একই। তবে সঠিক নিয়মে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলঃ
  • জমি নির্বাচন
  • সার প্রয়োগ
  • বীজ বপন
  • সেচ
  • রোগ ও পোকামাকড় দমন
  • ফসল সংগ্রহ
জমি নির্বাচনঃ বারি সরিষা ১৪ চাষ করার জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করুন। এই সরিষা চাষ করার জন্য বেলে দোআশ মাটি অত্যন্ত উপযোগী মাটির পিএইচ মান ৫.৫ হলে অত্যন্ত ভালো হয়। এরপর জমি ভালোভাবে চাষ করে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিন। জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য চারিদিকে ড্রেন রাখুন।

সার প্রয়োগঃ জমিতে দুইটি চাষ দেওয়ার পর জমিতে সার প্রয়োগ করুন। প্রতি শতক অনুযায়ী ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৫ কেজি গোবর সার, জিপসাম ৫০০ গ্রাম, বরিক এসিড ২৫ গ্রাম সকল সার একসাথে মিশিয়ে জমিতে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন। এরপর জমিতে পুনরায় দুইটি চাষ দিয়ে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিন।

বীজ বপনঃ জমিতে দ্বিতীয় চাষের সাথেই লাঙ্গলের মাধ্যমে অথবা হাতে বীজ বপন করুন। প্রতি শতক অনুযায়ী ৩০ হারে বীজ বপন করুন। এতে গাছে কিছুটা পাতলা হলে গাছ বেশ শক্ত পোক্ত ও দানা বেশ বড় হয়।

সেচঃ বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি মধ্যে সেচ। জমিতে আদ্রতা থাকলে সেচের প্রয়োজন নেই। তবে জমি শুষ্ক হলে বীজ বপন করার ২০ দিন পর সেচ দিন। এরপর পুনরায় গাছে ফুল আসার সময় সেচ দিতে হবে। এরপর দানা পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে একবার সেচ দিন। প্রথম অবস্থায় জমে আর্দ্র থাকলে সর্বোচ্চ ২ বার সেচ দিলেই হবে।

রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ সরিষার বেশ কিছু রোগ হয় এরমধ্যে আল্টারনারিয়া ব্লাইট, পাউডারী মিলডিউ, প্রতিরোধে ছত্রাক নাশক স্প্রে করুন। পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক স্প্রে করুন।

ফসল সংগ্রহঃ বারি সরিষা ১৪ বপন করার ৮০-৯০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে কয়েকদিন আগে অথবা পরে ফসল পাকে। সরিষা পরি পক্ষ হলে, বাদামি রঙ ধারণ করলে ফসল কেটে সংগ্রহ করুন।

প্রিয় পাঠক উপরে বেশ কিছু বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে বারি সরিষা ১৪ সহজে চাষ করতে পারবেন এবং দ্রুত লাভবান হতে পারবেন। প্রিয় পাঠক আশা করি বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য

অনেকে বারি সরিষা চাষ করবেন বলে বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চান। অন্যান্য সরিষা চাষের চাইতে বারি সরিষা ১৪ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। কম খরচে এই সরিষা চাষ করে প্রচুর টাকা লাভ করা যায়। বারি সরিষা ১৪ জাতটি বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি উদ্ভাবন করেছে। উচ্চ ফলনশীল, তেল সমৃদ্ধ, প্রতিকূল পরিবেশ সহনীয় বারি সরিষা ১৪ জাত। 

বারি সরিষা ১৪ উচ্চ ফলনশীল জাত। বীজ বপনের ৮০-৯০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। আমন ধান কাটার পর জমি চাষ করে অথবা চাষ না করেও এই সরিষা বপন করতে পারবেন। সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে প্রতি হেক্টরে ২ তখন পর্যন্ত সরষে পাওয়া যায়। বারি সরিষা ১৪ জাতের দানায় প্রচুর পরিমাণে তেল থাকে তেলের পরিমাণ ৪৫%। 
বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি - বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য
যা অন্যান্য সরিষার তেলের চাইতে অনেক বেশি। বারি সরিষা ১৪ শীতকালীন আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বারি সরিষা ১৪ জাতের গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৯০-১০০ সেমি পর্যন্ত হয়। প্রতিটি গাছে গড়ে ১০০-১২০ টি পর্যন্ত ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ২০-২২ টি পর্যন্ত বীজ থাকে। এই সরিষার জাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। 
অন্যান্য সরিষার চাইতে তুলনামূলকভাবে এই সরিষাটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। বারি সরিষা ১৪ অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বারি সরিষা ১৪ জাতে ১-২ বার সেচ দিলে সবচাইতে ভালো হয়। প্রিয় পাঠক উপরে বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করেছি। আশা করি বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্যের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

বারি সরিষা ১৪ এর জীবনকাল

অন্যান্য সরিষার মতোই বারি সরিষা জীবনকাল পায়। তবে আবহাওয়া অনুযায়ী এর জীবনকাল কিছুটা কম বেশি হতে পারে। সঠিক সময় বপন করলে বারি সরিষা ১৪ ৮৫-৯০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে এর চাইতে কম সময়ের মধ্যেই জীবন কাল শেষ হতে পারে।

বারি সরিষা ১৪ এর ফলন

অনেকে বারি সরিষা ১৪ চাষ করবেন বলে বারি সরিষা ১৪ এর ফলন সম্পর্কে জানতে চান। অন্যান্য সরিষার চাইতে বারি সরিষা ১৪ এর ফলন অনেক বেশি। বারি সরিষা ১৪ প্রতি বিঘা জমিতে ৭-৮ মন ফলন হয়। বারি সরিষা ১৪ প্রতি হেক্টর জমিতে ১.৮-২ ফলন হয়। সঠিক সময়ে বীজ বপন করলে ও ভালো পরিচর্যা করলে এর চাইতে বেশি ফলন হতে পারে।

বারি সরিষা ১৭

অনেকে প্রতিনিয়ত বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য ও বারি সরিষা ১৭ জাত সম্পর্কে খোঁজ করেন। বারি সরিষা ১৭ অন্যান্য জাতের মতই এটি প্রচুর ফলন হয়। বারি সরিষা ১৭ জাতের গাছ ৭৫-৮০ দিন বাঁচে। বারি সরিষা ১৭ এর ফলন প্রতি বিঘায় ৬-৭ মন। প্রতি হেক্টর জমিতে ১.৫-১.৮ টন ফলন হয়। বারি সরিষা ১৭ জাতের বীজে তেলের পরিমাণ ৪২-৪৪%। বারি সরিষা ১৭ গাছের উচ্চতা ৮০-৯০ সেমি পর্যন্ত হয়।

বারি সরিষা ১৫

বারি সরিষা ১৫ উচ্চ ফলনশীল সরিষার জাত। এটি প্রচুর ফলন দেয়। বারি সরিষা ১৫ বীজ বপন থেকে শুরু করে ৯০-১০০ দিন পর্যন্ত বাঁচে। প্রতিবিঘাতে বারি সরিষা ১৫ এর ফলন হয় ৮-১০ মন। সরিষার প্রতি দানায় তেলের পরিমাণ ৪৪%। বারি সরিষা ১৫ গাছের উচ্চতা ১০০-১২০ সেমি পর্যন্ত হয়। বারি সরিষা ১৫ জাতের শাখা প্রশাখা অনেক বেশি হয় অনেক ফল ধরে। আপনি চাইলে অন্যান্য জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা ১৫ চাষ করতে পারেন।

বারি সরিষা ৯ চাষ পদ্ধতি

অনেকে বারি সরিষা ৯ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ করেন। বারি সরিষা ৯ চাষ করার জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করুন। জমি ভালোভাবে চাষ করে মই দিয়ে মাটির ঝুরঝুরে করে নিন। এরপর প্রতি শতকে ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম ডিএপি, ৩৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ৫ কেজি গোবর সার ভালোভাবে মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করুন। এরপর পুনরায় জমিতে চাষ দিন। 
প্রতি হেক্টরে ৬-৭ কেজি বীজ বপন করুন। গাছের পরিমাণ পাতলা হলে সরিষার আকার বড় হয়। জমি শুষ্ক হলে সেচ দিন। বারি সরিষা ৯ জাতে সর্বোচ্চ দুই বার সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এরপর ছত্রাক নাশক, কীটনাশক সময় মত স্প্রে করুন। বীজ বপনের পর ৮৫-৯০ দিনের মধ্যেই ফসল কাটার উপযুক্ত হবে। ফসলের রং বাদামি একার ধারন করলে ফসল কেটে সংগ্রহ করুন।

বারি সরিষা ১৮

অন্যান্য জাতের মতই বারি সরিষা ১৮ একটি উন্নত জাত। আপনি চাইলে বারি সরিষা ১৮ চাষ করে দেখতে পারেন। এর ফলন প্রতিবিঘায় ৭-৯ মন পর্যন্ত হয়। সময় মত বীজ বপন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বীজ বপনের সময় অক্টোবর মাসের শেষের দিক। তবে নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেও বীজ বপন করতে পারেন। এটি রোগ প্রতিরোধী জাত। 

সর্বোচ্চ ১-২ বার সেচ দিলেই বারি সরিষা ১৮ জাত সংগ্রহের উপযুক্ত হয়ে যায়। বারি সরিষা ১৮ জাতের জীবনকাল ৮৫-৯০ দিন। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তনে কিছুটা কম সময় পেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলটিতে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি ও বারি সরিষা ১৪ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য শেয়ার করেছি। এছাড়া অন্য জাতের সরিষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সরিষার জাত সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে সে ক্ষেত্রে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। 

এ সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের ক্যাটাগরি গুলো ঘুরে আসুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url