পৈতা কেন পড়া হয় - পৈতা পড়ার নিয়ম - পৈতা অর্থ কি
আপনি যদি পৈতা কেন পড়া হয়? জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে পৈতা কেন পড়া হয়? জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ পৈতা কেন পড়া হয় - পৈতা পড়ার নিয়ম - পৈতা অর্থ কি
- পৈতা অর্থ কি
- পৈতা কেন পড়া হয়
- পৈতা পড়ার নিয়ম
- পৈতা মন্ত্র - পৈতা ধারণ করার মন্ত্র
- ক্ষত্রিয় পৈতা
- পৈতা তৈরির পদ্ধতি
- পৈতা কেন পড়া হয় - পৈতা পড়ার নিয়ম - পৈতা অর্থ কিঃ শেষ কথা
পৈতা অর্থ কি?
প্রিয় পাঠকগণ পৈতা অর্থ কি? এ বিষয়ে জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন। পৈতা শব্দটি হিন্দুধর্ম অবলম্বীদের সাথে জড়িত। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পৈতা অর্থ কি? এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং পৈতা কেন পড়া হয়? তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন সবার আগে পৈতা অর্থ কি? জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ গীতার ১৮ অধ্যায়ের নাম - গীতার কয়টি নাম জানুন
পৈতা অর্থ হলো যজ্ঞোপবীত। সৃষ্টির আদি যুগ থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রথা ছিল, ব্রহ্মচার্য পালন করা এবং এই নিয়ম বাধ্যতামূলক ছিল। ব্রহ্মচার্য শব্দটি দুটি অংশ যথাব্রহ্মা শব্দের অর্থ হলো স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা এবং চার্য শব্দটির অর্থ হলো অনুসরণকৃত।
পৈতা কেন পড়া হয়?
পৈতা কেন পড়া হয়? এ বিষয় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। বিশেষ করে এই শব্দটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে জড়িত সাধারণত তাই পৈতা কেন পড়া হয়? বিষয়টি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পৈতা কেন পড়া হয়? বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
উপনয়ন একটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান। এটি প্রকৃতপক্ষে তিনটি পবিত্র সূত্র যা দেবী সরস্বতী, গায়ত্রী ও সাবিত্রীর প্রতীক। যজ্ঞোপবীত বা পৈতা সংস্কার কে হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্ম অনুষ্ঠান বলে মনে করা হয়। পৈতা তিনটি শত যুক্ত একটি সুতো যা পুরুষের বাম কাজের ওপর থেকে ডান বাহু নিচ পর্যন্ত পরিধান করানো হয়।
পৈতাকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হয় এবং এর যাবতীয় নিয়ম শাস্ত্রে বলা হয়েছে যা কঠোরভাবে মেনে চলা আবশ্যক। পৈতা তিনটি উৎসের সমন্বয়ে গঠিত। পৈতা পড়লে এবং এর সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চললে কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেন না ওই ব্যক্তি। পৈতা পড়লে শরীরের রক্ত চলাচল ভালো হয়। এমন অবস্থায় হৃদরোগ ও রক্তচাপের কোন সমস্যা হয় না এবং ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।
পৈতা পড়ার নিয়ম
পৈতা পড়ার নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। পৈতা পড়ার নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা সাধারণত তাই এটি সঠিকভাবে কাজ করে না। পৈতা পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে অবশ্যই পৈতা করার নিয়ম অনুযায়ী আমাদের এটি পড়তে হবে। তাহলে চলুন পৈতা পড়ার নিয়মগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১। হিন্দু ধর্ম মতে পৈতাকে অনেক পবিত্র মনে করা হয়। এবং এর পবিত্রতা বজায় রাখতে এর নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক।
২। মলমত্রত্যাগের পূর্বে ডান কানে পৈতা দিতে হবে এবং হাত পরিষ্কার করার পরে কান থেকে বের করে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শরীর সম্পর্কে ১০ টি অজানা তথ্য যা আপনিও জানেন না
৩। পৈতা কোন সুতো ছিড়ে গেলে বা ছয় মাসের বেশি হলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
৪। যে কোন ব্যক্তি তখনই পৈতা পরিধান করা উচিত যখন সে এই নিয়মগুলো সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে সক্ষম হবে।
পৈতা মন্ত্র - পৈতা ধারণ করার মন্ত্র
পৈতা মন্ত্র অর্থাৎ পৈতা ধারণ করার মন্ত্র সম্পর্কে এখন আলোচনা করা হবে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা পৈতা ধারণ করার মন্ত্র সম্পর্কে জানেনা তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি তৈরি করা। এখন আমরা আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পৈতা মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করব। ইতিমধ্যে আমরা পৈতা কেন পড়া হয়? এ বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি চলুন পৈতা মন্ত্র সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
যজ্ঞোপবীত বা প্রতিটি পৈতা তিনটি আলাদা সূত্রকে গিট দিয়ে বেঁধে তৈরী। এই গিট বা বন্ধনকে ব্রহ্মগ্রন্থি বা ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত গ্রন্থি বলা হয়। এই তিনটি সূত্র ঈশ্বর কর্তৃক নির্দেশিত প্রতিটি মানুষের তিনটি ব্রত বা ঋন বা দায়িত্বের প্রতীক। কি সেই তিনটি ঋন যা প্রত্যেকটি মানুষকে শোধ করতে হয়। সেগুলো হচ্ছে দেবঋণ, পিতৃঋণ ও ঋষিঋণ।
১। দেবঋণ- ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত আমাদের বেঁচে থাকার অপরিহার্য এ পৃথিবী,পরিবেশ ও প্রানীকুলের প্রতি দায়িত্ব।পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ে তোলা,পরিবেশ শুদ্ধ করা ও জীবে সেবা করা দেবঋণের অন্তর্গত।
২। পিতৃঋণ- পিতামাতার প্রতি ঋন। নিঃস্বার্থভাবে এই দুই জীবন্ত দেবতা আমাদের মানুষ করেন, তাদের যথাসাধ্য সেবাযত্ন করা আমাদের কর্তব্য।
৩। ঋষিঋণ- প্রাচীন বৈদিক ঋষিগন থেকে শুরু করে নিজের গুরু-শিক্ষক,এরাই আমাদের প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তোলেন।এদের সেবা, অনুস্মরণ করা ই ঋষিঋণ।
ক্ষত্রিয় পৈতা
ক্ষত্রিয় পৈতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। সাধারণত তাই ক্ষত্রিয় পৈতা জানতে চেয়ে google এ সার্চ করে আমাদের আর্টিকেল ওপেন করেছে। আপনি যদি ক্ষত্রিয় পৈতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন ক্ষত্রিয় পৈতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ক্ষত্রিয় হল হিন্দু সম্প্রদায়ের চতুর্বর্ণের দ্বিতীয় বর্ণ। বৈদিক সমাজে মানুষদের চারটি শ্রেণীতে সংগঠিত করা হয়েছিলঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। রাজ্যশাসন, রাজ্যরক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা ক্ষত্রিয়ের দায়িত্ব।ঋগ্বেদের পুরুষসূক্ত অনুসারে ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তি স্রষ্টার বাহু থেকে। গীতায় শ্রীকৃষ্ণের উক্তি অনুসারে যারা এরূপ গুণ ও কর্মের অধিকারী তারাই ক্ষত্রিয়। স্মৃতি শাস্ত্রে, কিছু যুদ্ধপ্রিয় জাতি ক্ষত্রিয় শ্রেণীর অধীনে নির্ধারিত ছিল।
প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ক্ষত্রিয়দের সামাজিক মেলামেশা ও বিবাহাদি প্রচলিত ছিল। ক্ষত্রিয়রা রাজ্যশাসনের পাশাপাশি বিদ্যাচর্চাও করত। এদের মধ্যে মুনি, ঋষি, ধ্যানী, জ্ঞানী, ব্রহ্মবিদ, শাস্ত্রবিদ, পুরোহিত অনেকেই ছিলেন। দৈহিক গঠনে তারা ব্রাহ্মণদের সন্নিকটস্থ। জৈনধর্মে ব্রাহ্মণদের চেয়ে ক্ষত্রিয়দের প্রাধান্য বেশি। বৌদ্ধ জাতকের মতে ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ বর্ণ। জৈনধর্মে বহু শূদ্র ও বৈশ্য উন্নত হয়ে ক্ষত্রিয় শ্রেণীভুক্ত হয়েছে।
পৈতা তৈরির পদ্ধতি
পৈতা তৈরীর পদ্ধতি সম্পর্কে এখন আলোচনা করা হবে। হিন্দুধর্ম অবলম্বীদের কাছে পৈতা জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকে আছে যারা পৈতা তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানেনা তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এখন পৈতা তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।
পৈতা বাঁম কাধ থেকে ঝুলিয়ে ডান দিকের কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। প্রতিটি সুতো যেন হৃদপিন্ডের উপর দিয়ে যায়,এর মানে হল প্রতিটি দায়িত্ব যেন হৃদয় থেকে পালন করা হয়। আট বছর থেকে বারো বৎসর বয়সের মধ্যে উপনয়নের মাধ্যমে এই পৈতা প্রাপ্ত হয়। এছারা তান্ত্রিকদের গুরু দ্বারা পৈতা প্রাপ্ত হয়।
আরো পড়ুনঃ ভারতে কয়টি দেশ আছে- ভারতে কয়টি রাজ্য আছে কি কি
যজ্ঞোপবীত বা পৈতার অপরনাম প্রতিজ্ঞাসূত্র বা ব্রতসূত্র। আটবছর থেকে বার বছর বয়সের ভেতর প্রতিটি বৈদিক ধর্মালম্বীর উপনয়ন আবশ্যক এবং উপনয়নের মাধ্যমে এই পবিত্র সুত্রটি সে গুরুকর্তৃক প্রাপ্ত হয়। যদিও বর্তমানে পুরুষশাসিত ঘুণে ধরা সমাজ নারীদের থেকে এই অধিকার কেড়ে নিয়ে বেদের বিরুদ্ধাচরন করছে। প্রতিটি পৈতা তিনটি আলাদা সূত্রকে গিট দিয়ে বেঁধে তৈরী।
পৈতা কেন পড়া হয় - পৈতা পড়ার নিয়ম - পৈতা অর্থ কিঃ শেষ কথা
পৈতা কেন পড়া হয়? পৈতা পড়ার নিয়ম, পৈতা অর্থ কি? পৈতা তৈরীর পদ্ধতি , ক্ষত্রিয় পৈতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url